চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালও কি এতটা উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের মাঝে তীব্র উত্তেজনা ছিল। করতালি আর চিৎকারের মধ্যে যে কেউ খেই হারিয়ে ফেলতে পারতেন, কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ এবং অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের ফুটবলাররা ছিলেন চরম পেশাদার। গ্যালারিতে কী হচ্ছে, সে দিকে তাদের একটিও নজর ছিল না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ানো।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কনর গ্যালাঘারের গোলে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ এগিয়ে যায়। তারা শেষ পর্যন্ত সেই এক গোলের ব্যবধান ধরে রাখে। তবে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোর ২-২ হয়ে যায়, অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে কে যাবে তা নির্ধারণ করতে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা হয়। তারপরও নিষ্পত্তি না হওয়ায়, ম্যাচ চলে আসে টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারেই নাটকীয়তা ছিল চরম। প্রথম শট নিতে আসেন কিলিয়ান এমবাপে, এবং তার বুদ্ধিদীপ্ত শট গিয়ে জড়িয়ে পড়ে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের জালে। ইয়ান ও’ব্লাক কোনওভাবেই ঠেকাতে পারেননি। পরের শট নেন অ্যাতলেতিকোর আলেকজান্ডার সোরলথ, এবং থিবো কুর্তোয়া তার শট ঠেকানোর কোনও সুযোগই পাননি।
এরপর রিয়ালের জুড বেলিংহ্যাম শট নেন এবং সেটি গোল হয়ে যায়। তারপর শট নিতে আসেন অ্যাতলেতিকোর আর্জেন্টাইন তারকা হুলিয়ান আলভারেজ। তিনি শট নেন, এবং বলটি থিবো কুর্তোয়ার মাথার ওপর দিয়ে চলে গিয়ে রিয়ালের জালে জমা পড়ে। তবে রেফারি সেই গোল বাতিল করে দেন।
এটি ঘটেছিল কারণ রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কুর্তোয়া রেফারির কাছে অভিযোগ করেন যে, আলভারেজ বলটিকে দুই পায়ে টাচ করেছেন। রেফারি এরপর ভিএআর চেক করার সিদ্ধান্ত নেন। ভিএআর থেকে জানা যায়, আলভারেজ শট নেয়ার আগে স্লিপ কেটে পড়ার সময় দুই পায়ে বলের টাচ করেছিলেন।
থিবো কুর্তোয়া বলেন, “আমি দেখলাম আলভারেজ বলটিকে দু’বার টাচ করেছে। তাই আমি রেফারির কাছে এটি তুলে ধরেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “এটা খুব সহজে দেখা সম্ভব ছিল না, কিন্তু তাদের জন্য এটি ছিল দুর্ভাগ্যজনক।”
আলভারেজের গোল বাতিল হওয়ার কারণ ছিল, তিনি শট নেয়ার সময় স্লিপ কেটে পড়ে গিয়েছিলেন এবং শট নেয়ার আগে দুই পায়ে বলের টাচ হয়েছিল, যার ফলে তার গোল বাতিল হয়।
এরপর তৃতীয় শটে রিয়ালের ফেদে ভালভার্দে এবং অ্যাতলেতিকোর অ্যানজেল কোরেয়া গোল করেন। চতুর্থ শট নিতে এসে রিয়ালের লুকাস ভাসকুয়েজ দুর্বল একটি শট নেন, যা ইয়ান ও’ব্লাক ঠেকিয়ে দেন।
টাইব্রেকারে অ্যাতলেতিকোর সামনে সমতায় ফেরার সুযোগ ছিল, কিন্তু মার্কোস লরেন্টে তার শট ক্রসবারে মেরে গোলবঞ্চিত হন। এরপর রিয়ালের জন্য শেষ শট নিতে আসেন আন্তোনিও রুডিগার। তিনি গোল করতে পারলেই রিয়াল কোয়ার্টারে চলে যেত। রুডিগার সেই শটটি কোনো ভুল না করে অ্যাতলেতিকোর জালে পাঠিয়ে দেন। এরপরই রিয়ালের ফুটবলাররা বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন।