ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার বিচারকার্য আবার শুরু

স্পোর্টস ডেস্ক

আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পরের বছর, ২০২১ সালে, তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে সাতজন স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এই মামলার বিচারকাজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। বুয়েনস আইরেসের সান ইসিদ্রোতে চার মাসব্যাপী এই বিচারকার্যে ১০০ জনেরও বেশি সাক্ষী, সহ পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকরা সাক্ষ্য দেবেন। যদি অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হন, তাদের ৮ থেকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

ম্যারাডোনা দীর্ঘদিন মাদকের নেশায় আসক্ত ছিলেন, যার কারণে তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধে। এই অবস্থার জন্য মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পর তিনি হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে যান। তবে ২৫ নভেম্বর রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান। আর্জেন্টিনার সরকারি কৌঁসুলির আহ্বানে গঠিত ২০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানায়, যদি সঠিক চিকিৎসা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো, তবে ম্যারাডোনা বেঁচে থাকতে পারতেন। তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটও বলেছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু দায় রয়েছে।

ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলা করার অভিযোগ আনা হয়েছে নিউরোসার্জন লিওপোলদো লুক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অগুস্তিনা কোসাচোভ, মনোবিদ কার্লোস দিয়াস, চিকিৎসা সমন্বয়কারী নান্সি ফরলিনি, নার্সিং সমন্বয়কারী মারিয়ানো পেরোনি, চিকিৎসক পেদ্রো পাবলো দি স্পানা এবং নার্স রিকার্দো আলমিরোর বিরুদ্ধে। এছাড়া এক নার্স হিসেলা দাহিয়ানা মাদ্রিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে, তবে তার বিচার আগামী জুলাইয়ে শুরু হবে।

অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন এবং তাদের মতে, ম্যারাডোনার মৃত্যুর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কোসাচোভের আইনজীবী ভাদিম মিসান চুক বলেন, ‘আমার মক্কেল শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের দায়িত্বে ছিলেন, শারীরিক নয়, তাই তাকে খালাস পাওয়া উচিত।’

অপরদিকে, ম্যারাডোনার পরিবারের দাবি, ফাঁস হওয়া অডিও এবং লিখিত বার্তাগুলো প্রমাণ করে যে তার জীবন ঝুঁকিতে ছিল। ম্যারাডোনার ছেলে মারিও বৌদ্রি বলেন, ‘বার্তাগুলো থেকে পরিষ্কার যে, চিকিৎসক দল চাননি ম্যারাডোনার মেয়ে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করুক, কারণ তা হলে তাদের অর্থের ক্ষতি হতে পারতো।’

ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিতেছিল, যা তাকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাকে স্মরণ রাখতে আর্জেন্টিনায় বিভিন্ন ভাস্কর্য, প্রাচীর ও প্রদর্শনী তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, বুয়েনস আইরেসের কেন্দ্রে ১,০০০ বর্গ-মিটার জায়গায় তার সমাধি সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি দর্শক আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ম্যারাডোনার মেয়ে দালমা ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আমরা চাই আমাদের বাবা মানুষের ভালোবাসায় চিরকাল বেঁচে থাকুন।’

You may also like