২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ রয়েছে। যদিও ২০১১ বিশ্বকাপের পর সম্পর্কের খানিকটা বরফ গলেছিল, এবং ২০১৩ সালে পাকিস্তান ভারত সফর করেছিল—কিন্তু সেটিই ছিল শেষবার। এরপর থেকে রাজনৈতিক সম্পর্ক যতটাই খারাপ হয়েছে, ততটাই দুর্লভ হয়ে উঠেছে দুই দেশের ক্রিকেট লড়াই।
তবে একটা জায়গায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা হতো—আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে। বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো আসরে নিয়মিতভাবেই একই গ্রুপে পড়ত ভারত ও পাকিস্তান, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ছিল এক বড় আকর্ষণ। সর্বশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল।
কিন্তু এবার সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) আগেই জানিয়েছিল, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ তো নয়ই, এখন তারা আইসিসির টুর্নামেন্টেও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে অনিচ্ছুক। এমনকি আইসিসি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হবে যেন ভারতকে আর পাকিস্তানের মুখোমুখি না করা হয় কোনো টুর্নামেন্টে।
এই অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে একাধিক পর্যটকের প্রাণহানি ঘটে। এরপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যায়। বন্ধ হয়ে গেছে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং এমনকি ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে। এবার সেই টানাপড়েন সরাসরি আঘাত হানছে ক্রিকেটে।
ইতিমধ্যে ভারতীয় প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানও পিএসএলে কর্মরত ভারতীয় সম্প্রচারকর্মীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিসিসিআই এখন চাইছে, আইসিসির যেকোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এড়াতে।
ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বিসিসিআই খুব শিগগিরই আইসিসি এবং এসিসির কাছে চিঠি পাঠাবে, যাতে আসন্ন টুর্নামেন্টগুলোয় দুই দলকে ভিন্ন গ্রুপে রাখা হয়। বিশেষ করে এশিয়া কাপের মতো আসরেও যাতে ভারত-পাকিস্তান একই গ্রুপে না পড়ে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে বলা হবে।
বিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা বলেছেন, “কেন্দ্রের পরামর্শ মেনেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কাজ করে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন আইসিসির প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবে কি না, সেটা নির্ভর করবে পরিস্থিতি এবং আইসিসির সিদ্ধান্তের উপর।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আইসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান জয় শাহ—যিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র। ফলে ভারত যদি আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসিকে চিঠি দেয়, তাহলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।