জাদেজার ব্যাটের ছোঁয়ায় বল সীমানা পার হতেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা মাঠে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েন। ক্রিজে থাকা লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে তারা উদযাপনে মেতে ওঠেন। এরপর তারা স্মারক হিসেবে স্টাম্প সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এইভাবে সংগৃহীত দুটি স্টাম্প রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির হাতে চলে যায়। দুবাই স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে দুজন স্টাম্প দিয়ে ডান্ডিয়া খেলতে শুরু করেন। দুই কিংবদন্তির এমন অভিনব উদযাপন ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের চিত্রপটে স্থায়ী হয়ে রইল।
এটি ভারতের চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা ২৫ বছর আগের প্রতিশোধের পাশাপাশি কিউইদের বিপক্ষে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে পরাজয়ের ইতিহাসও বদলে দিয়েছে। দুবাই স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের ২৫১ রান ১ ওভার হাতে রেখে ৬ উইকেটে পেরিয়ে যায় ভারত। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ৯ মাসের ব্যবধানে এটি ভারতের দ্বিতীয় আইসিসি ট্রফি। ৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত, এবং এই ইনিংসের জন্য তিনি ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্র ২৬৩ রান ও ৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন।
কিউইদের ২৫১ রান তাড়া করতে নেমে ভারত দুরন্ত গতিতে শুরু করে। রোহিত শর্মা জেমিসনকে ছয় মেরে ইনিংস শুরু করেন। মাত্র ৪১ বলেই তিনি হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান। অধিনায়কের দাপটে ভারত ১৭ ওভারেই ১০০ রান তুলে নেয়। রোহিত-শুভমানের ওপেনিং জুটি দেখে মনে হচ্ছিল ভারত হেসে-খেলে ফাইনাল জিতে যাবে। এই সময় ড্যারেল মিচেল শুভমানের একটি ক্যাচ ফেলেন। এরপর গ্লেন ফিলিপস দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে শুভমানকে ফিরিয়ে দেন। পরবর্তী ওভারে দুরন্ত ছন্দে থাকা বিরাট কোহলি এলবি হন। এটি ছিল কিউই স্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েলের প্রথম বল। এরপর রোহিত ৮৩ বলে ৭৬ রান করে রাচিন রবীন্দ্রের কাছে স্টাম্পড হন। মাত্র ১৭ রানের মধ্যে তিনটি উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে পড়ে যায়। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে শ্রেয়াস আয়ার ও অক্ষর প্যাটেল ৬১ রান যোগ করে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। এর মধ্যে ৪৪ রানে শ্রেয়াসের ক্যাচ ফেলেন জেমিসন, তবে নতুন জীবন কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। মাত্র ৪ রান যোগ করে স্যান্টনারের বলে রাচিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শ্রেয়াস। এরপর অক্ষর প্যাটেলও ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে ভারত আবার কিছুটা চাপে পড়ে। কিন্তু তখনও উইকেটে ছিলেন লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া। তারা শান্ত মনোভাব নিয়ে ব্যাট চালিয়ে দলকে জয় থেকে কাছে নিয়ে যান। জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকা অবস্থায় পান্ডিয়া জেমিসনের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এরপর রাহুল জাদেজাকে নিয়ে ম্যাচটি ফিনিশ করেন।
টসে জিতে নিউজিল্যান্ড যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিল, তাতে তাদের রান খুব বেশি হয়নি। উইলি ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র ৭.৫ ওভারে ৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ ওভারে ইয়াং, রাচিন ও উইলিয়ামসনকে তুলে নিয়ে ভারত দুর্দান্তভাবে খেলা ফিরে পায়। ইয়াংকে এলবির ফাঁদে ফেলে ভারতের প্রথম হাসি ফোটান বরুণ চক্রবর্তী। যদিও রোহিতের প্রধান স্পিন অস্ত্র কুলদীপ যাদব, বরুণের ছায়ায় কিছুটা হারিয়ে গিয়েছিলেন। সে ক্ষোভে কুলদীপ পর পর দুই ওভারে রাচিন ও উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে দিয়ে তার ধার প্রমাণ করেন। ১৮ রানের মধ্যে তিনটি উইকেট হারিয়ে কিউইরা চাপে পড়ে যায়। টম লাথামও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি, জাদেজার বলে এলবি হয়ে যান। তবে পঞ্চম উইকেটে ড্যারেল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস ৫৭ রান যোগ করে কিছুটা পরিস্থিতি সামাল দেন। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ড্যারেল মিচেল ও মিচেল ব্রেসওয়েল ৪৬ রান যোগ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ড্যারেল মিচেল মন্থর ব্যাটিং করেন, ১০১ বলে ৬৩ রান করেন। এই সময় রোহিত শর্মার হাতে একটি জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ব্রেসওয়েলের হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে কিউইরা ২৫০ রান পার করে। ৪০ বল থেকে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি, যার জন্য কিউইরা শেষ ১০ ওভারে ৭৯ রান তুলেছিল।
কিউইদের ২৫১ রানে আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পিনারদের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। ভারতের চার স্পিনার ৩৮ ওভারে ১৪৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন। অন্যদিকে, দুই পেসার ১২ ওভারে ১০৪ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট পায়। রোহিত শর্মা হয়তো আক্ষেপ করবেন যে অক্ষর প্যাটেল দুই ওভার বাকি রেখেছিলেন। নিউজিল্যান্ডও আক্ষেপ করবে যে তাদের সেরা বোলার ম্যাট হেনরি ফাইনালে খেলতে পারেননি। সেমিফাইনালে কাঁধে চোট পাওয়া এই ডানহাতি পেসার সুস্থ হতে পারেননি।