বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) আবারও দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের পদত্যাগ, টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান এনামুল হক মনির সরে দাঁড়ানো এবং ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের সঙ্গে সহকর্মীদের দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে বিসিবির অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে চলছে অস্থিরতা। এই সবকিছুর কেন্দ্রে মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক।
আবাহনী ও মোহামেডানের মধ্যকার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একাদশ রাউন্ডের ম্যাচে আম্পায়ার সৈকতের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন হৃদয়। মাঠে ও সংবাদ সম্মেলনে তার আচরণকে কেন্দ্র করে টানা দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোহামেডান এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করে, কিন্তু বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি তখনও শাস্তি বহাল রাখে।
কিন্তু বিস্ময়করভাবে আম্পায়ার্স বিভাগ শাস্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করে হৃদয়কে খেলার সুযোগ দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেন টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান এনামুল হক মনি। একই ইস্যুতে বোর্ডের চাকরি ছাড়েন আম্পায়ার সৈকত।
ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল এক টেলিভিশন আলোচনায় হৃদয়ের শাস্তি নিয়ে মন্তব্য করেন যা অন্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ রেফারি রাহুলের বিপক্ষে যায়। এতে রেফারিদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার মিঠু জানান পরে এক মিটিংয়ে সেই উত্তেজনা এতটাই চরমে ওঠে যে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
এ ঘটনায় দেবব্রত পাল অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেন তিনিই বরং রাহুলের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। যদিও তার বক্তব্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে হৃদয়ের শাস্তি নিয়ে বিসিবির ওপর মোহামেডানের প্রভাব নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিসিবি পরিচালক ও মোহামেডান কর্মকর্তা মাহাবুবুল আনাম দাবি করেছেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। তবে স্বীকার করেছেন ক্লাব হিসেবে তারা শাস্তি কমানোর আবেদন করেছিল।
এ ঘটনায় বিসিবির অভ্যন্তরে রীতিমতো অবিশ্বাস ও বিভাজনের বাতাস বইছে। ম্যাচ অফিসিয়ালদের দাবি আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মিঠু প্রথমে মনিকে বলেছিলেন বোর্ডের পরিচালকরা মিটিং করে হৃদয়ের শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কথায় হতাশ হয়ে পদত্যাগ করেন মনি।
সর্বশেষ, মিঠু জানিয়েছেন হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে তবে তা এ মৌসুমে কার্যকর হবে নাকি পরবর্তী মৌসুমে—সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। শাস্তি কমানো বা স্থগিতের পেছনে “চাপ” ছিল বলেও আকারে ইঙ্গিতে জানিয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে বিসিবিতে যে ধরণের বিশৃঙ্খলা ও অনাস্থার জন্ম নিয়েছে তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অশনি সংকেতই বয়ে আনছে।
ইউএ / টিডিএস