মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের অনুশীলন নেটে ক্যামেরা আর মোবাইল ফোনের লেন্স যেন একদৃষ্টিতে অপেক্ষা করছিল একজনের জন্য—তিনি হলেন নাহিদ রানা, বাংলাদেশের নতুন গতির তারকা পেস বোলার।
নীল-সাদা আকাশি জার্সি, কালো শর্টস এবং সাদা চেকered মোজা পরে আজ অনুশীলনে এসেছেন নাহিদ। বোলিংয়ের সময় তাঁর শরীরী ভাষায় দৃঢ়তা স্পষ্ট, এবং হাত ঘুরতেই ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল ছুটে যায় স্টাম্প লক্ষ্য করে। ২২ বছর বয়সী এই পেসার বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় হয়ে উঠছেন।
নাহিদ রানার গতির কোন কমতি নেই, তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাত্র এক ম্যাচ খেলেই তিনি উপলব্ধি করেছেন, ইনসুইংয়ে আরও উন্নতি প্রয়োজন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে ৯ ওভারে ৩২ ডট বল এবং ১ উইকেট নিয়ে তিনি কিউই ব্যাটারদের কোনো রান তুলতে দেননি। তবে ইনসুইংয়ে আরও গতি আনলে তিনি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবেন।
এখন ইনসুইং নিয়ে কাজ করছেন নাহিদ। আজ সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে আবাহনীর নেট অনুশীলনে উপস্থিত হয়ে দেখা হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ আলমগীর কবিরের সঙ্গে, যিনি নাহিদের ছোটবেলার কোচ। দুজনের এক সেশন হয়ে গেল মাঠে। আলমগীর বলেন, “নাহিদের আউটসুইং দুর্দান্ত। ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল ছাড়তে পারে, নিয়ন্ত্রণও ভালো। তবে ইনসুইংয়ে গতি বাড়াতে পারছে না। বলটা একটু বেশি ফ্লাইট হয়ে যাচ্ছে, যা ব্যাটাররা বুঝে নেয় এবং সুযোগ নেয়।”
গুরু-শিষ্যের এই সেশন প্রায় ঘণ্টা খানেক চলল। পপিং ক্রিজে বুট রেখে একের পর এক বোলিং করলেন নাহিদ। সেশনের মূল লক্ষ্য ছিল কবজির অবস্থান নিয়ে কাজ করা—আউটসুইংয়ের জন্য কবজির চাপ ডান পাশে এবং ইনসুইংয়ের জন্য বাঁ পাশে। এই সামান্য পরিবর্তনেই বলের গতি ও সুইং আরও কার্যকর হয়।
নাহিদের ইনসুইং বল ১৩৩-১৩৮ কিলোমিটার গতিতে থাকে, আর আউটসুইং বল ১৪৫ কিলোমিটার বা তার বেশি। তিনি এই পার্থক্য কমাতে চান। যদি ইনসুইং বলেও গতি আনতে পারেন, তবে ব্যাটারদের জন্য তাঁকে খেলা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হওয়ার পরপরই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নেমে নাহিদ রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে আবাহনীর জার্সিতে মাঠে নামেন এবং জানান দেন তিনি কতটা প্রস্তুত। ৯ ওভারে ৩৭ ডট বল (৬৯ শতাংশ) দিয়ে ২ উইকেট নেন, এবং ব্যাটাররা তাঁর বল খেলতে খুবই হিমশিম খাচ্ছিলেন।
রূপগঞ্জের ব্যাটাররা নাহিদের গতির বল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। কেউ কেউ চেষ্টা করলেন সীমানা পেরোনোর, কিন্তু বেশিরভাগই ব্যর্থ হন। এই পারফরম্যান্স আবারও প্রমাণ করল, বাংলাদেশ পেয়েছে এমন এক পেসার, যিনি দীর্ঘ সময় দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে থাকবেন।
নাহিদ জানেন, সামনে আরও কঠিন আন্তর্জাতিক সিরিজ রয়েছে এবং নিজেকে বারবার প্রমাণ করতে হবে। শুধু গতি দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে জায়গা করা কঠিন। প্রয়োজন নিখুঁত সুইং, নিয়ন্ত্রণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং। তাই মিরপুর হোক বা অন্য কোনো মাঠ, নাহিদ প্রতিটি সেশনে মনোযোগ দিচ্ছেন ইনসুইংয়ে গতি বাড়ানো এবং বোলিং আরও ধারালো করার কাজে।
পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে নিজের জাত চিনিয়েছেন নাহিদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গতি দিয়ে বারবার প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের পরীক্ষা নিয়েছেন। জ্যামাইকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের তিন ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। বিশ্ব ক্রিকেট বিশ্লেষকরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ—অনেকে বলছেন, বাংলাদেশে এক নতুন গতির যুগের সূচনা করে দিয়েছেন তিনি।
একজন পেসারের জন্য গতির সঙ্গে সুইং যোগ হলে তিনি আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। নাহিদ রানা সেই পথেই এগোচ্ছেন। আর কিছুদিনের মধ্যে যদি ইনসুইংয়ে ১৪৫ কিলোমিটার গতি আনতে পারেন, তবে বাংলাদেশ পাবে আরও বিধ্বংসী এক পেসার।