Home » ই-স্পোর্টস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো সম্ভাবনাময় পেশা

ই-স্পোর্টস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো সম্ভাবনাময় পেশা

by Tahmid Rahman

অনলাইনভিত্তিক কম্পিউটার বা মোবাইল গেমিং প্রতিযোগিতাগুলোকে বলা হয় ইলেকট্রনিক স্পোর্টস বা ই-স্পোর্টস। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতোই ই-স্পোর্টসের জনপ্রিয়তা ও বাজারমূল্য বিশ্বজুড়ে রকেট গতিতে বাড়ছে। মালয়েশিয়া সরকার ই-স্পোর্টসকে তাদের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছে, জাপান গেমিংকেন্দ্রিক উচ্চ বিদ্যালয় খুলেছে, আর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রেও ই-স্পোর্টস নিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই ই-স্পোর্টস ২০২২ এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং কমনওয়েলথ গেমসেও অন্তর্ভুক্তির আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের জন্যও ই-স্পোর্টস ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো একটি সম্ভাবনাময় পেশা হয়ে উঠতে পারে। ধীরগতিতে হলেও দেশের ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি সামনে এগোচ্ছে।

ই-স্পোর্টসে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস নিয়ে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি ঢাকার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এ গেমিং জোনের আয়োজন ছিল অন্যতম আকর্ষণ। গিগাবাইটের সহযোগিতায় এই গেমিং জোনে বিনামূল্যে গেম খেলার সুযোগসহ চারটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

প্রতিযোগিতায় কাউন্টার স্ট্রাইক গ্লোবাল ওপেনশিপ, ভ্যালোরেন্ট, মোবাইল লিজেন্ড ব্যাং ব্যাং, এবং ভ্যালোরেন্ট ফিমেল গেমিং-এ ৮৮টি দল অংশ নেয়। এ ছাড়াও ফিফা গেম খেলার স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতার সুযোগ ছিল। মেয়েদের ৮টি দলসহ প্রায় ৪০ জন নারী শিক্ষার্থী এই আয়োজনে অংশ নেয়। বিজয়ীদের মধ্যে মোট ৭ লাখ টাকার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

গিগাবাইট বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা মোহাম্মদ আনাস খান ই-স্পোর্টসকে “নলেজেবল বিজনেস” হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে, ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণকারীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ভাষাগত দক্ষতা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক জব মার্কেটে প্রবেশের সুযোগ পায়। আনাস খান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি গেমাররা ইতোমধ্যে ভারত ও থাইল্যান্ডের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

বিশ্বে ই-স্পোর্টসের বাজার
ই-স্পোর্টস আর্নিং ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। এখন পর্যন্ত ৭৪ জন বাংলাদেশি গেমার ৬৯টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ২,০৩,৩৮৮ মার্কিন ডলার পুরস্কার জিতেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল (PUBG Mobile) গেম থেকে, যা মোট আয়ের ৫৩.৪ শতাংশ।

ই-স্পোর্টসের বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। ২০২১ সালে এর বৈশ্বিক বাজারমূল্য ছিল ১.২২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে বেড়ে ১.৪৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৯ সাল নাগাদ এই বাজার ৫.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, প্রতি বছর প্রায় ২১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
ই-স্পোর্টস কেবল গেম খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে গেম ডেভেলপার, ৩ডি অ্যানিমেটর, ভিডিও এডিটর, স্টোরিটেলার, অর্গানাইজার, ব্রডকাস্টার, কাস্টার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, এবং ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভিডিও মেকিং, গেম স্ট্রিমিং, এবং সরাসরি ধারাভাষ্যের মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য আয়ের সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি একটি সুপরিকল্পিত কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হলে, এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সরকারি সহযোগিতা ও ইতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে ই-স্পোর্টস একটি প্রধান পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

You may also like