৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। যার ছোঁয়া লেগেছে ক্রিকেট অঙ্গনেও। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছে নতুন সভাপতি, পাশাপাশি যুক্ত হয়েছেন দুই নতুন পরিচালক। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে বেশ কয়েকজন পরিচালক হারিয়েছেন পদও।
পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে দলের কোচিং স্টাফেও। হেড কোচ হিসেবে বিদায় নিয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো অভিজ্ঞ কোচ ফিল সিমন্স। হাথুরুসিংহেকে বিদায় দেওয়ার আগে বিসিবি তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে শোকজ নোটিশও পাঠিয়েছিল।
ঘটনার অনেকদিন পর এবার মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক এই কোচ। অস্ট্রেলিয়ার ‘কোড স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারের সারাংশ প্রকাশ করেছে ক্রিকেটবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’।
নিজের ভাষ্যমতে, অনেকটাই প্রাণভয় নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সাধারণত নিরাপত্তার জন্য একজন গানম্যান দেওয়া হলেও শেষ সময়ে সেটাও পাননি তিনি। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তাকে গ্রেফতারের শঙ্কাও ঘিরে ধরেছিল বলে দাবি করেন লঙ্কান এই সাবেক কোচ।
অস্ট্রেলিয়ার ‘কোড স্পোর্টস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আমাকে বলেছিলেন— ‘আপনার চলে যাওয়া উচিত। এ নিয়ে বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আপনার কাছে কি বিমানের টিকিট আছে?’ এই কথাগুলো আমার কাছে একটা সতর্ক সংকেতের মতো মনে হয়েছিল। তখনই মনে হলো কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি সোজা ব্যাংকে গেলাম বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য টাকা নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ এল— “চন্ডিকা চাকরিচ্যুত একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করেছেন”। এটা দেখে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বললেন, “কোচ আমি আপনার সঙ্গে যাব। মানুষ আপনাকে রাস্তায় দেখে ফেললে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।”’
দেশত্যাগের সময়কার কথা উল্লেখ করেন এভাবে, ‘এবার আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। কারণ আমাকে বাংলাদেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি একটি টুপি ও হুডি পরে ছিলাম কোনো ধরনের সুরক্ষা ছিল না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মধ্যরাতের ফ্লাইটে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের মতো হাথুরুসিংহে নিজেও গ্রেপ্তারের শঙ্কায় ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন কোড স্পোর্টসের সেই সাক্ষাৎকারে, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার জন্য তারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। সেখানে এমনও ঘটেছে যে আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে রানওয়েতে বিমানটি থামানো হয়েছিল এবং তারা তাঁকে বিমান থেকে বের করে এনেছিল। আমার মনে তখন এসবই ঘুরপাক খাচ্ছিল।’
ইউএ / টিডিএস