মাঠের পারফরম্যান্সে আর্জেন্টিনার ধারে কাছেও নেই মেক্সিকো, তবু মেক্সিকান ফুটবল সমর্থকদের কাছে আর্জেন্টিনা যেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের দৃষ্টিতে এই লড়াই অনেকটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতোই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সেই জায়গা থেকেই তারা লিওনেল মেসিকে দেখেন প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে, আর তাই প্রায়ই তাঁর প্রতি কটূক্তিও করে থাকেন।
এই মানসিকতা রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তুলেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘Simply Football’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, মেক্সিকান সমর্থকেরা এমন একটা অবস্থান তৈরি করেছে, যেন আর্জেন্টিনার সঙ্গে তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। অথচ বাস্তবে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর মধ্যে কোনো তুলনাই চলে না। মেসি বলেন, তিনি বুঝতেই পারেন না, এই অদ্ভুত ধারণাটা এসেছে কোথা থেকে।
তবে মাঠে, বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে দুই দলের ম্যাচে উত্তেজনা থাকে। যেমন ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারিয়েছিল মেক্সিকোকে। সেই ম্যাচের পর থেকেই মেসিকে নিয়ে ক্ষোভ বাড়ে মেক্সিকান সমর্থকদের।
এ নিয়ে প্রশ্নে মেসি বলেন, তিনি কখনও কাউকে অপমান করেননি এবং সবসময় মেক্সিকান মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসাই পেয়েছেন। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের পর থেকেই তার প্রতি আচরণ বদলে যায়।
মেসি এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর বিপক্ষে চারটি গোল করেছেন, যার শেষটি আসে কাতার বিশ্বকাপে। তিনি বলেন, ওই গোলটা শুধু গোল ছিল না, বরং পুরো দলের জন্য এক বিরাট মানসিক প্রশান্তি নিয়ে এসেছিল। সৌদি আরবের কাছে হারের পর যখন আর্জেন্টিনা চাপের মধ্যে ছিল, তখন সেই গোল তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়।
তবে মাঠের বাইরের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে মেসি আন্দ্রেস গুয়ার্দাদোর জার্সি রেখে দেন নিজের লকারের সামনের মেঝেতে। মেক্সিকান বক্সিং তারকা ক্যানেলো আলভারেজ সেটিকে মেক্সিকান জাতির অপমান হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
পরে মেসি ও আর্জেন্টিনা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। ক্যানেলো নিজেও পরে দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু ততদিনে ক্ষোভ জমে ওঠে অনেক মেক্সিকান সমর্থকের মনে।
এ বছরের শুরুতে লাস ভেগাসে ক্লাব আমেরিকা অব মেক্সিকোর বিপক্ষে ইন্টার মিয়ামির ম্যাচে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। গ্যালারি থেকে মেসির প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা হয়। উত্তরে গোল করার পর মেসি তিন আঙুল দেখিয়ে উদযাপন করেন, যার মানে ছিল আর্জেন্টিনার তিনটি বিশ্বকাপ জয়।
সব মিলিয়ে, মাঠের বাইরের এই ঠান্ডা যুদ্ধ আপাতত থামছে না বলেই মনে হচ্ছে।