দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে খেলোয়াড়দের শারীরিক খেলা, আক্রমণাত্মক ট্যাকল কিংবা উত্তেজনার দৃশ্য নতুন কিছু নয়। প্রায়ই এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতেও। এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাক্ষী হলো লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব টুর্নামেন্ট কোপা লিবার্তাদোরেস। চিলিতে আয়োজিত একটি ম্যাচে জোর করে স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন দুই সমর্থক।
ঘটনার দিন ম্যাচ শুরুও হয়েছিল। কোলো-কোলো ও ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফোর্তালেজার মধ্যকার ম্যাচে ৭২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ছিল স্কোরলাইন। এরপর হঠাৎ করে কিছু দর্শক ফের মাঠে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তা শঙ্কায় ফোর্তালেজার খেলোয়াড়রা মাঠ ছাড়লে ম্যাচটি বাতিল করে দেওয়া হয়। চিলির স্থানীয় গণমাধ্যম ও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে লাতিন ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কনমেবল।
চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর এস্তাদিও মনুমেন্তালে ম্যাচটি আয়োজন করা হয়। খেলা শুরুর আগ মুহূর্তেই দর্শকদের একটি অংশ জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন দায়িত্বে থাকা পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ব্যবহার করে জলকামান।
তবু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এক পর্যায়ে ভেঙে পড়ে মাঠ ঘেরা সীমানা প্রাচীর (পেরিমিটার ফেন্স)। ধারণা করা হচ্ছে, তাতেই পদদলিত হয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী ও ১৩ বছরের এক কিশোর।
নিহত তরুণীর বোন জানান, তার বোনের কাছে বৈধ টিকিট ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করব। আমাদের পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আমরা জানি না কীভাবে এই শোক সইব।’ তিনি এও বলেন, ‘যেখানে দুইজন মারা গেছে, সেখানে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।’
ঘটনার পর কনমেবল এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে জানায়, ‘মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে সমর্থকদের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মর্মাহত। নিহতদের পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।’ এছাড়া তারা নিশ্চিত করেছে, সফরকারী ক্লাব ফোর্তালেজার খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং পরিবারের সদস্যরা সবাই নিরাপদ রয়েছেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও ফুটবলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিলো। এখন পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব।