চিকিৎসকের মতে, ম্যারাডোনাকে বাসায় নেওয়া ভুল ছিল

স্পোর্টস ডেস্ক

বুয়েনস আইরেসের সান ইসিদরোর আদালতে চলছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুকে ঘিরে চিকিৎসায় অবহেলার মামলার শুনানি। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মৃত্যুর আগে তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত সাতজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের অভাবে মৃত্যু হয়েছে ফুটবল কিংবদন্তির।

সর্বশেষ শুনানিতে ম্যারাডোনার দীর্ঘদিনের চিকিৎসক মারিও আলেহান্দ্রো সায়েতে বলেন, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে বাসায় ফিরিয়ে আনা বড় ধরনের ভুল ছিল। তাঁর মতে, কোনো হোম হসপিটাল নয়, ম্যারাডোনার পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া উচিত ছিল।

ম্যারাডোনার শেষ সময় কেটেছিল বুয়েনস আইরেসের এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া নেওয়া বাড়িতে, যেখানে সাময়িকভাবে তাঁর চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সেই বাড়ি আদৌ একজন রোগীর জন্য উপযোগী ছিল না বলে অভিযোগ করেন ম্যারাডোনার কন্যা দালমা ও জিয়ানিন্নার আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো। আদালতে তিনি বলেন, “বাসাটা ছিল এতটাই নোংরা, যেন শূকরের খোঁয়াড়।”

ফরেনসিক চিকিৎসক মরিসিও কাসিনেল্লি, যিনি ম্যারাডোনার ময়নাতদন্তে অংশ নেন, আদালতে জানান—সেই বাসা ‘হোম কেয়ার’ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। সায়েতেও আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, “তাঁকে বাসায় চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, তাঁকে সামলানো সহজ ছিল না। চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকলে সেটি তাঁর জন্য নিরাপদ হতো।”

অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যার ফলেই ম্যারাডোনার মৃত্যু ঘটে। অভিযুক্ত সাতজনের মধ্যে আছেন নিউরোসার্জন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, নার্স ও চিকিৎসা সমন্বয়কারীসহ আরও কয়েকজন। দিনের বেলায় দায়িত্বে থাকা নার্সের বিচার হবে আলাদাভাবে।

মামলার শুনানিতে এর আগেও আইনজীবী বার্লান্দো জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে কথোপকথনে দেখা গেছে তারা ম্যারাডোনার মৃত্যু সম্পর্কে আগাম ধারণা পেয়েছিলেন। কথোপকথনে তাঁরা বলছিলেন, “এল গোর্দো চলে যাচ্ছেন”—যা থেকে বোঝা যায়, তাঁরা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেও যথাযথ পদক্ষেপ নেননি।

ম্যারাডোনার ময়নাতদন্তে জানানো হয়, তীব্র পালমোনারি এডেমা এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। চিকিৎসক সায়েতে বলেন, “প্রমাণগুলো বলছে, সময়মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হলে মৃত্যুটিকে এড়ানো যেত।”

এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের ৮ থেকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সাক্ষ্যগ্রহণের তালিকায় আছেন প্রায় ১২০ জন, আর পুরো বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে আসছে জুলাই পর্যন্ত।

You may also like