আইপিএলে ঘূর্ণিজাদু ছড়ালেন ভিগনেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

বড় ম্যাচ মানেই বড় খেলোয়াড়দের দাপট—এটাই স্বাভাবিক। তবে মাঝে মাঝে নতুনরাও নিজেদের আগমনী বার্তা দিয়ে চমকে দেন সবাইকে। যেমনটা করলেন ভিগনেশ পুথুর। যদিও তাঁর দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস জয় পায়নি। আইপিএলের ‘এল ক্লাসিকো’ খ্যাত ম্যাচে রবিবার ৪ উইকেটের ব্যবধানে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে যায় মুম্বাই। তবে ১৫৫ রানের অল্প পুঁজি নিয়েও যে লড়াই করেছে তারা, তার মূল কৃতিত্ব ভিগনেশের। বাঁহাতি লেগ স্পিনে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে আলো ছড়ান এই তরুণ।

কে এই ভিগনেশ?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামই বলে দিচ্ছে, খুব একটা পরিচিত নাম নন তিনি। ২৪ বছর বয়সী এই স্পিনার এর আগে কখনো ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলেননি। কেরালার অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেলেও রাজ্য দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। কিন্তু মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের স্কাউটরা ঠিকই খুঁজে বের করেছে তাঁকে।

আইপিএল মাত্র দুই মাসের টুর্নামেন্ট হলেও প্রতিভা খোঁজার ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সারা বছরই নজর রাখে। স্থানীয় লিগগুলো থেকে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের তুলে আনে তারা। কেরালার এক স্থানীয় লিগে আলেপ্পি রিপলসের হয়ে খেলেছিলেন ভিগনেশ। যদিও তিন ম্যাচে মাত্র দুটি উইকেট পেয়েছিলেন, তবুও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের স্কাউটদের নজর এড়ায়নি তাঁর প্রতিভা। ফলে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত নিলামে ৩০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে নেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

এখানেই থেমে থাকেনি মুম্বাই। বছরের শুরুতে এমআই কেপটাউনের (মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের শাখা দল) নেট বোলার হিসেবে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগে পাঠানো হয়। সেখানে ভালো করায় এবার আইপিএলে মূল মঞ্চেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি।

স্বপ্নের অভিষেক

চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে রোহিত শর্মার ‘ইমপ্যাক্ট সাব’ হিসেবে নামেন ভিগনেশ। প্রথম বল হাতে পান অষ্টম ওভারে। তখন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সামনে বিপাকে ছিল মুম্বাই। কিন্তু সেই চাপ থেকে দলকে স্বস্তি এনে দেন ভিগনেশ। তাঁর ফুল লেংথের ডেলিভারি রুতুরাজ বাউন্ডারিতে পাঠাতে চাইলেও, উইল জ্যাকস সহজ ক্যাচ নিয়ে ফেরান তাঁকে।

পরের ওভারে একই কৌশলে ফেরান শিভাম দুবেকে। এরপর সুইপ করতে গিয়ে তৃতীয় শিকারে পরিণত হন দীপক হুডা। শেষ ওভারে উইকেট না পেলেও তাঁর বোলিংয়ে দারুণ খুশি মুম্বাই অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “অসাধারণ! তরুণদের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুম্বাই বরাবরই এগিয়ে। আমাদের স্কাউটরা ১০ মাস ধরে এই প্রতিভা খোঁজার কাজ করেন, আর ভিগনেশ তারই এক ফল। আমি তার একটি ওভার হাতে রেখেছিলাম, যদি ম্যাচ গভীরে যায়। তবে ১৮তম ওভারে তাঁকে আনা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল আমার জন্য।”

পেসার থেকে স্পিনার হওয়া

বাঁহাতি লেগ স্পিনারদের সাধারণত ‘চায়নাম্যান’ বলা হয়, তবে ভিগনেশ এই শব্দের সঙ্গে পরিচিতই ছিলেন না! কারণ, ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন একজন মিডিয়াম পেসার। কিন্তু স্থানীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শেরিফের পরামর্শে স্পিন বোলিংয়ে মনোযোগী হন এবং ধীরে ধীরে কবজির কারিকুরি রপ্ত করেন।

ক্রিকেটের পাশাপাশি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পড়ছেন ভিগনেশ। বেড়ে উঠেছেন এক সাধারণ পরিবারে। তাঁর মা কেপি বিন্দু একজন গৃহিণী, আর বাবা সুনীল কুমার পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা কখনোই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁর স্বপ্নকে। অবশেষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো আইপিএলে অভিষেকের মধ্য দিয়ে!

You may also like